জোহার জঙ্গলমহল ডেস্ক : লালমাটির দেশে শাল-পিয়াল ঘেরা আদিবাসী গ্রামগুলিতে এখন বাঁদনা-সহরায় উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে। ফি বছর কালীপুজো থেকে শুরু হওয়া এই পরবকে ঘিরেই মেতে ওঠেন রাঢ় বাংলার আদিবাসীরা। বসন্তের বাহা পরবের মত এই সহরায় উৎসবও সাঁওতাল আর মুন্ডা জনগোষ্ঠীর কাছে সমান ঐতিহ্যের। ছোটনাগপুর, মানভূম-সহ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি।
তবে হুগলি, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার দক্ষিণাঞ্চল ও বর্ধমানের পূর্বাঞ্চলের সাঁওতাল সমাজ কালীপুজোর সময় এই উৎসব পালন করলেও পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার উত্তরাঞ্চল, বর্ধমানের পশ্চিমাঞ্চল, বীরভূম ও বিহারের দুমকা সাঁওতাল পরগনায় সহরায় উৎসব পালিত হয় পৌষ মাসে। যদিও সব ক্ষেত্রেই একই থাকে উৎসবের আচার-আচরণ। শুরু হল বাদনা পরব।
প্রতি বছর কালী পুজোর আগে থেকে গ্রামে মাটির বাড়িতে প্রলেপ দিয়ে ঘর সাজিয়ে তোলেন মহিলারা। গ্রামের মানুষ কালী পুজোর রাতে ঢোল ধমসা মাদল করতাল নিয়ে এলাকার সবার বাড়িতে যান। সবার গোয়ালঘরে আহিরা সঙ্গীত গেয়ে গরুকে জাগিয়ে রাখেন গ্রামবাসীরা।
পরের দিন অর্থাৎ ভাইফোঁটার দিন আলপনা দিয়ে গোয়াল ঘর সাজিয়ে তোলা হয়। গোয়ালে পুজো করে গরু ও মহিষদের তেল এবং সিঁদুর দিয়ে বরণ করা হয়। এর পর বিকেলে গ্রামের ফাঁকা মাঠে খুঁটিতে বাঁধা হয় গরু এবং মহিষদের। তাদের সামনে ঢোল ধামসা বাজিয়ে সেই সঙ্গে মুখের সামনে চামড়া দেখিয়ে রাগানো হয়। গরু মহিষকে বেঁধে রাখার খুঁটির উপরে পিঠে পুলি ও টাকা বেঁধে দেন গ্রামের কৃষকরা তাঁদের।

গরুখুটান
অমাবস্যার দিন বিকেল থেকেই প্রতিটি আদিবাসী ঘরে গোরু-বলদকে গোয়ালে বেঁধে পুজো করা হয়। তারপর সারারাত ধরে চলে গোরু জাগানোর গানবাজনা। পুরুষেরা অমাবস্যার রাতে দল বেঁধে প্রতিটি ঘরে গোরু জাগানো গান গায়। উৎসবের প্রথম দিনে আদিবাসীরা তাদের দেবতার উদ্দেশে পুজো দেয়। সন্ধ্যা থেকে ধামসা-মাদলের ধিতাং ধিতাং বোলের সঙ্গেই শুরু হয় নাচগান।